ফাতাওয়া ও প্রশ্নোত্তর আকিদা, শিরক ও বিদআত আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল ১ টি
রজবের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার রাত- এই পাঁচ রাতে দুআ কবুল হওয়া সংক্রান্ত হাদিসটি বানোয়াট

উপরোক্ত পাঁচ রাতে দুআ কবুল হওয়া সংক্রান্ত একটি হাদিস আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে তা বানোয়াট। নিম্নে উক্ত হাদিসটি এবং সে সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের অভিমত ও বিশ্লেষণ প্রদান করা হল:

হাদিসটি হল: আবু উমামা আল বাহেলি রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,


 خَمْسُ لَيَالٍ لا تُرَدُّ فيهن الدعوةُ : أولُ ليلةٍ من رجبٍ ، وليلةُ النِّصفْ من شعبانَ وليلةُ الجُمُعةِ ، وليلةُ الفِطْرِ ، وليلةُ النحرِ

‘পাঁচটি রাত এমন আছে, যেগুলোতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না। (অর্থাৎ অবশ্যই কবুল করেন।) রাতগুলো হল—রজবের প্রথম রাত, অর্ধ শাবানের রাত, জুমার রাত, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার রাত।’ [তারিখে দিমাস্ক- ইবনে আসাকির ১০/৪০৮, মুসনাদুল ফিরদাউস ২/১৯৬]

এই মর্মে বর্ণিত হাদিসটিকে মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে (বানোয়াট)।
শাইখ আলবানি বলেন, موضوع (বানোয়াট)। [সিলসিলা যঈফাহ/১৪৫২ এবং যঈফুল জামে/২৮৫২]


❑ বিশ্লেষণ:
এ হাদিসের মূল ভিত্তি হল, ইবরাহিম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি ইয়াহিয়া (১৮৪ হি.) নামক একজন মুহাদ্দিস। ইমাম মালিক, আহমদ, বুখারি, ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন, ইয়াহিয়া আল-কাত্তান, নাসাঈ, দারাকুতনী, যাহাবী, ইবনে হিববান ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তাকে “রাফেজি শিয়া, মুতাজিলি ও ক্বাদরিয়া আকিদায় বিশ্বাসী” বলে অভিযুক্ত করার পাশাপাশি মিথ্যাবাদী এবং অপবিত্র হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
ইমাম শাফেঈ প্রথম বয়সে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। বিধায় কোনও কোনও শাফেঈ মুহাদ্দিস তাঁর দুর্বলতা কিছুটা হাল্কা করার চেষ্টা করেন। তবে শাফেঈ মাজহাবের অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ এবং অন্যান্য সকল মুহাদ্দিস এক কথায় তাকে ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘পরিত্যক্ত’ বলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন ইমাম শাফেঈ নিজেও তাঁর এ শিক্ষকের দুর্বলতা ও অগ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তিনি পরবর্তী জীবনে তার সূত্রে কোনও হাদিস বললে তার নাম উল্লেখ না করে বলতেন, “আমাকে বলা হয়েছে”, বা “আমি শুনেছি” বা অনুরূপ কোনও বাক্য ব্যবহার করতেন। [ইবনে হিববান, আল-মাজরূহীন, ১/১০৫-১০৭; ইবনে ‘আদী, আল-কামিল, ১/৩৫৩-৩৬৭; ইবনুল জাওযী, আদ-দুয়াফা ১/৫১; যাহাবী, মীযানুল ইতিদাল, ১/১৮২-১৮৫; ইবনে হাজার, তাহযীব ১/১৩৭-১৩৯]
এ ছাড়াও এর বর্ণনা সূত্রে আবু সাঈদ বুনদার বিন উমর (بندار بن عمر الروياني) নামে একজন বর্ণনাকারী আছে। যে মুহাদ্দিসগণের নিকট ‘মিথ্যাবাদী ও হাদিস জাল কারী’ বলে পরিচিত। [যাহাবি-মিযানুল ইতিদাল, ২/৭০, ইবনে হাজার-লিসানুল মিযান, ২/৬৪] [সূত্র: hadithbd]

এটি মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক গ্রন্থে  [৪/৩১৭-হা/৭৯২৭] ইবনে উমর রা. থেকে এবং বায়হাকি সুনানে কুবরা গ্রন্থে [৩/৩১৯, হা-৬০৮৭] আবুদ দারদা রা. থেকে মওকুফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সনদগতভাবে সেগুলোও দুর্বল। [সূত্র: জর্ডান দারুল ইফতা, ফতোয়া নম্বর: ১৯০৩]

সুতরাং এই বানোয়াট ‌হাদিসের অবস্থা বর্ণনা পূর্বক মানুষকে এ সম্পর্কে সচেতন করার উদ্দেশ্য ছাড়া তা প্রচার করা হারাম। আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের নামে সব ধরণের ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও ভ্রান্ত কথাবার্তা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

আল্লাহু আলাম।